হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মোঃ নূরুল্লাহ রহঃ এঁর জীবন বৃত্তান্ত আংশিক দৈনিক পত্রিকা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪ লেখক এ এস এম ফজলুল্লাহ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উকিল পাড়া স্পোটিং ক্লাব, কিশোরগঞ্জ। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, মুজাদ্দেদ ই যামান, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাচ্ছের, মুহাদ্দিস, মুফতি, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রাক্তন ইমাম, শহিদী মসজিদ ও বড় বাজার মসজিদের প্রাক্তন খতিব, হয়বতনগর এ ইউ আলিয়া মাদ্রাসা’র প্রাক্তন অধ্যক্ষ, হয়বতনগর এ ইউ আলিয়া মাদ্রাসা’র ছাত্রাবাস ও এতিমখানা’র প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতা’র পক্ষের আলেম, মুক্তিযোদ্ধ পরবর্তী সময়ে বন্ধ থাকা আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসাটি খোলা ও শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করে সার্বিক দায়িত্ব পালনকারী, কিশোরগঞ্জ নগুয়া’র নূরুল উলুম আর্দশ মহিলা মাদ্রাসা ও বালিকা এতিমখানা’র প্রতিষ্ঠাতা, নূরে এলাহী জামে মসজিদ কমপ্লেক্স ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা, শাহনাওয়াজ ছফিরিয়া মাদ্রাসা ও বালক এতিমখানা’র প্রতিষ্ঠাতা, নূরুল উলুম ফাইজুন্নেছা ফারকুন্দা বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র প্রতিষ্ঠাতা, কিশোরগঞ্জ শহরে সর্বপ্রথম মহিলাদের ঈদের ও জুম্মা’র জামাতের ব্যবস্থাকারী, কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে দ্বীন শিক্ষা কার্যক্রম চালুকারী, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, এছাড়াও কিশোরগঞ্জ – ময়মনসিংহে প্রায় শতাধিক মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা’র প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা আবুুল খায়ের মোহাম্মদ নূরুল্লাহ (রহঃ) । পিতা- আলহাজ্জ্ব কাজী মাওলানা মোহাম্মদ শাহনাওয়াজ (রহঃ) । মাতা মরহুমা মোছাঃ ফাইজুন্নেছা ফাতেমা । তিনি “বায়তুন্নুর” ১০২৮, বেগম রোকেয়া সড়ক, উকিলপাড়া, শোলাকিয়া, উপজেলা ও জেলা- কিশোরগঞ্জ এ বসবাস করতেন। পৈত্রিক নিবাস- “কাজী বাড়ী” গ্রাম- পাছদরিল্লাহ, ইউনিয়ন- রাজগাতী, উপজেলা- নান্দাইল, জেলা ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ। জন্ম নানা বাড়ীতে- রোজ সোমবার প্রত্যুশে, ১৩৪৯ হিজরী, ২৯শে শ্রাবণ ১৩৪৫ বাংলা, ১৪ই আগষ্ট ১৯৩৯ খ্রিঃ। নানা- মাওলানা ফজলুর রহমান, গ্রাম- দগদগা, ইউনিয়ন- জাঙ্গালিয়া, উপজেলা- পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জ। তিনি ২৯শে শাওয়াল ১৪২৭ হিজরী, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪১৩ বাংলা, ২২ নভেম্বর ২০০৬ খ্রিঃ রোজ বুধবার, ঢাকা বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৮ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন। উনার জানাজা নামাজ ২৩ নভেম্বর ২০০৬ খ্রিঃ রোজ বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। তখন দেশে অনির্দিষ্ট কালীন সড়ক, রেল ও নৌ অবরোধ থাকা সত্তেও জানাজায় লক্ষাধিক মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাসে তাহার প্রতিষ্ঠিত নূরে এলাহী জামে মসজিদ সংলগ্ন “জান্নাতুল খুলদ” কবরস্থানে উনাকে দাফন করা হয়। পারিবারিক বৈশিষ্ট্যঃ- উনার দাদাজান ও দাদীজান সে সময়ে দিনদার পরহেজগার ও তাহাজ্জদ গুজার ছিলেন।উনার নানাজান আলেম থাকায় তাহার আম্মাজানও মুত্তাকীয়া তাহাজ্জদ গুজার ছিলেন। উনার আব্বাজান সে সময়ে প্রখ্যাত পরহেজগার আলেম ছিলেন, উনার ফতুয়া ফরায়েজের যথেষ্ট দক্ষতা ছিল, তিনি বাংলা আরবী উর্দু ফারসী ও ইংরেজী ভাষায় অনার্গল কথা বলিতে পারিতেন, তিনি নান্দাইল রোড ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নান্দাইল রোড উচ্চ বিদ্যালয় সহ অনেক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন এবং মসুল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ- উনার আব্বাজান পাঁচটি ভাষায় দক্ষ থাকায় প্রথমে কায়দা, সেহ-পাড়া ও আরবী সাহিত্য শিক্ষা লাভ করেন উনার আব্বাজানের নিকট। উনার আব্বাজান প্রথম শিক্ষক ছিলেন। দ্বিতীয় শিক্ষক ছিলেন উনার নানাজান। পরবর্তীতে নোয়াখালী জেলা’র প্রসিদ্ধ কারী মাওলানা ইব্রাহিম সাহেবের ছাত্র আলহাজ্জ্ব মাওলানা কারী আব্দুস সালাম সাহেবের নিকট সাত কেরাতে কোরআন কারীম খতম করেন। তারপর উনার আব্বাজানের নিকট পাঁচটি ভাষায় প্রাথমিক ছবক গ্রহণ করেন। তারপর নিজ গ্রামে পাছদরিল্লাহ প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেন। তথা হইতে ৫ম শ্রেণী পাশ করিয়া উনার আব্বাজানের প্রতিষ্ঠিত নান্দাইল রোড ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে দুই বছর লেখাপড়া করার পর তিনি হয়বতনগর এ ইউ আলিয়া মাদ্রাসা হইতে ১৯৫২ খ্রিঃ দাখিল, ১৯৫৬ খ্রিঃ আলিম, ১৯৫৮ খ্রিঃ ফাজিল, ১৯৬০ খ্রিঃ কামিল হাদিছ পাশ করেন। উনার হাদিছের ওস্তাদ ছিলেন ( মুহাদ্দেছ জাওয়াদ আলী, মুহাদ্দেছ মোঃ আইনউদ্দিন, মুহাদ্দেছ মোঃ ওসমান গণি, মুহাদ্দেছ মোঃ আমিনুল হক, মুহাদ্দেছ মোঃ ইছরাইল, মুহাদ্দেছ মোঃ শাইক আহমেদ, মুহাদ্দেছ মোঃ দাউদ রাহেমাহুমুল্লাহ, মুহাদ্দেছ খতিব ওবায়দুল হক, উনারা তৎকালিন দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসা’র মুজাদ্দেছিনে কেরাম হইতে সনদ প্রদান করেন। যেমন মুহাদ্দেছ হোসাইন আহমেদ মাদানী রাঃ ও মুহাদ্দেছ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাঃ হইতে) । মাদ্রাসা ই আলিয়া ঢাকা হইতে ১৯৬১ খ্রিঃ কামিল ফিকাহ পাশ করেন (উনার) ফিকাহ ওস্তাদ ছিলেন মুফতি সৈয়দ আমিমুল ইহসান, মুফতি মোঃ শাহজাহান, মুফতি মোহাম্মদ আলী কুমিল্লা, উনারা মুফতি মোঃ আছগর হোসাইন, মুফতি মোঃ শাফী দেওবন্দী ও মুফতি মুশতাক আহমেদ কানপুরী রাঃ হইতে এজাজত দিয়াছেন)। আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ হইতে ১৯৬৩ খ্রিঃ দাওরায়ে তাফসীর পাশ করেন (উনার তাফসীরের ওস্তাদ ছিলেন মুফাচ্ছের মোহিব্বুর রহমান, মুফাচ্ছের মোহাম্মদ আলী গফরগাওয়ী, মুফাচ্ছের মোঃ আশরাফ আলী, মুহাদ্দেছ ও মুফাচ্ছের মোঃ ইহছানুল হক, মুহাদ্দেছ ও মুফাচ্ছের মোঃ মো’তাছিম বিল্লাহ, মুফাচ্ছের সাইদুজ্জামান, মুফাচ্ছের আলতাফ হোসাইন, মুফাচ্ছের মোঃ আব্দুল খালেক, মুহাদ্দেছ ও মুফাচ্ছের আব্দুর রহমান আল কাশগারী দামাত বারাকতুহুম দেওবন্দ ও ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা’র ওস্তাদগণ তাহাদের কে এজাজত দিয়াছেন) । গুরুদয়াল সরকারী কলেজ কিশোরগঞ্জ হইতে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ১৯৭৪ খ্রিঃ এম এ কৃতিত্বের সহিত পাশ করেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, ফারসি, উর্দু ভাষায় পারদর্শি ছিলেন। উনার বোখারী শরীফের সংক্ষিপ্ত সনদ- মাওলানা নূরুল্লাহ সাহেব কে এজাজত দিয়াছেন মুহাদ্দেছ সৈয়দ আমিমুল ইহসান, তিনি শায়েখ মোস্তাক আহমাদ হইতে, তিনি আব্দুল হক ও হাছবুল্লাহ হইতে, তিনি শাহ আব্দুল গণি হইতে, তিনি আবেদ সিন্দি হইতে, তিনি ছালেক হইতে, তিনি ইবনে ছুন্নাহ হইতে, তিনি আহমাদ জালাল হইতে, তিনি আহমাদ হইতে, তিনি ইয়াহিয়া হইতে, তিনি মোঃ ইবনে ইউসুফ ফিরাবরি হইতে, তিনি ইসমাইল বোখারী হইতে, তিনি রাহমাতুল্লাহ আলাইহে ওয়া আলাইহিম হইতে, তিনি ছোলাছিয়াত হইতে, তিনি মাক্কি ইবনে ইব্রাহিম হইতে, তিনি সাহাবী ছালমা ইবনে আকওয়া রাঃ হইতে । তিনি ১৯৬১ খ্রিঃ তরীকার সনদ হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ আমিমুল ইহসান হইতে পাইয়াছেন এবং ১৯৮৮ খ্রিঃ হযরত মাওলানা আবুল আনছার আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী ফুরফুরা হতে খিলাফত প্রাপ্ত হন। গবেষণাঃ- তিনি ১৯৬১ খ্রিঃ হতে লিখতে শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন ১৮ ঘন্টা ইসলামিক ও অন্যান্য বিষয়ে লেখাপড়া করতেন। ১৯৯৮ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি ইসলামী বিষয়ে একশতেরও বেশী কিতাব (আরবীতে ৪১টি, উর্দুতে ২৫টি, ইংরেজীতে ১টি, বাংলায় ৬৫টি) সহ সর্বমোট ১৩২টি গ্রন’ রচনা করেন ( এর মধ্যে ফাজায়েলে মেছওয়াক, কোরবানী ও আক্বীকার ইতিহাস, ওয়াহী উচ্ছিয়াম (রোজার ওয়াহী), ইসলামের দৃষ্টিতে মুছীবাত, চিকিৎসা ও মৃত্যু, আদর্শ বিবাহ (ইসলাম ও যৌবন বিজ্ঞান), ফাযায়েলে নিয়াতি মাকবূল (ইসলামী দর্শন), ফাযায়েলে দোয়া, স্বপ্নে রাছুলুল্লাহ (দঃ) (নবী দর্শন), আছারুন্নাবী (দঃ) (নবীজীর পত্রাবলী), ফাযায়েল ও মাছায়েলে দরুদ ও ছালাম, তাফছিরে নূরে আল্লাহ, ত্বরীকায়ে রাছুলুল্লাহ (দঃ) (শাজারা), শরীয়ত, এলেম, ঈমান, পবিত্রতা, ত্বরীক্বত, হকীক্বত, মারেফত, বায়আত ও যিকরুল্লাহ), কোরআন পাঠের আদব কায়দা এই গ্রন’গুলো প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য গ্রন্থ গুলো প্রকাশের অপেক্ষায় আছে । ১৯৭৭ খ্রিঃ সৌদি আরবের জেদ্দা ভিত্তিক “ওজারাতুল ইলাম”র আহুত ইসলামী ফিকাহ্ বিষয়ে, ১৯৭৭ খ্রিঃ ও ১৯৭৮ খ্রিঃ ইসলামী ইতিহাস বিষয়ে ও ১৯৭৯ খ্রিঃ ইসলাম ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সৌদি আরব সরকার কর্তৃক পুরস্কার হিসেবে অর্থ ও সম্মান অর্জন করেন। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে তিনি বড় বাজার (সাহাবউদ্দিন) জামে মসজিদে প্রতি জুম্মা’র নামাজ পড়ানোর পর আছরের পূর্ব পর্যন্ত ইসলামী বিভিন্ন জটিল বিষয়ে স্লিপ বা মৌখিক প্রশ্ন করার সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দিতেন ( তখনকার সময় ইসলামিক বিষয়ে স্লিপের মাধ্যমে এভাবে সাথে সাথে উত্তর দিতে খুব একটা দেখা যায়নি ) । যাহার অনেক প্রশ্নই একেবারেই নতুন ছিল। । উনার বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া ফতুয়াগুলো সকলেই শুনিতে আগ্রহী ছিলেন, যদিও রাত ২/৩ টা বাজিয়া যাইতো। তিনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে দলিল প্রদান করিতেন। তিনি বিদআতকে পরাভূত করতে আমরণ জিহাদ করেছেন। তাঁর সমগ্র জীবনে চিন্তা চেতনায় সার নির্যাস ছিল “ত্বরীকায়ে রাছুলুল্লাহ (সা:) দর্শন”। জামায়াতে আহলে কোরআন ওয়াচ্ছুন্নাহ প্রন্থী ছিলেন। এ বিষয়ে স্বাধীনতাত্তোর সময়ে ঢাকায় পুরাতন সংসদ ভবনে ওআইসি আয়োজিত সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। বিশেষ করিয়া হানাফী সনদের ফিকাহ’র ফতুয়াগুলো বেশী ভালবাসতেন। গবেষণাকালে উনার আব্বাজানের কুতুবখানায়, হয়বৎনগর এ ইউ আলিয়া মাদ্রাসায়, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায়, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে, বাংলা একাডেমীর লাইব্রেরীতে, বাক্কা মোবারকে মসজিদুল হারামের, মদীনা ই মুনাওয়ারার মসজিদে নব্বীর কুতুবখানায় লেখাপড়া করেন। ১৯৮১ খ্রিঃ ফরজ হজ্ব আদায় করেন, এ সময়ে জাবালে রহমতে আছরের নামাজে ইমামতি করার সৌভাগ্য হয় তাঁর। এছাড়াও তিনি ১৯৯৪ খ্রিঃ বদলী হজ্ব এবং ১৯৯৬ খ্রিঃ রমযানুল মোবারকে বরকতের জন্য হারামাইনে ওমরা, রোজা, তারাবী, তাহাজ্জদ, এতেকাফ ও আল্লাহর ধ্যানে সময় অতিবাহিত করেন । উল্লেখ্য সৌদি আরব সফরের সময় সৌদি রেডিওতে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। তিনি দুনিয়া হইতে শিরক, বিদাত, কুফরী, ফাসেকী ও সকল প্রকার কবিরা, ছগিরা গোনাহ দূর করার জন্য “আমরী বিল মারুফ ওয়ানাহি আনিল মুনকার দল” প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ইহার মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ চালাইয়া যাইতেন। কর্মময় জীবনঃ- তিনি যখন ফাজিলে পড়েন (১৯৫৭ ও ১৯৫৮ খ্রিঃ) বাংলা ১২৯৮ সনে প্রতিষ্ঠিত পাছদরিল্লাহ জামে মসজিদে প্রথম জুম্মা’র নামাজে ইমামতি করেন । সর্বপ্রথম ১৯৬৩ খ্রিঃ প্রথম দিকে নেত্রকোনা জেলা’র কেন্দুয়া উপজেলা’র অর্ন্তগত রোয়ালবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসা’র প্রধান মাওলানা হিসাবে যোগদান করিয়া মেশকাত শরীফের কিতাবুত্তাহারাতের প্রথম হইতে পাঠদান আরম্ভ করেন। সেখানে ৬ মাস পাঠদানের পর মরহুম সৈয়দ রাফিকুল্লাহ সাহেবের পরামর্শে ৯/১১/১৯৬৩ খ্রিঃ হয়বৎনগর এ ইউ আলিয়া মাদ্রাসা’র ৩য় মুহাদ্দেছ হিসাবে যোগদান করিয়া পরবর্তীতে যোগ্যতা অনুসারে ২য় মুহাদ্দেছ, পরে শাইখুল হাদিছ, তাফসীর ও ফিকাহ পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ খ্রিঃ কিশোরগঞ্জের নেতৃত্বস্হানীয় আলেম ও ওলামা’রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও তিনি স্বাধীনতা মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এক অনুকরণীয় ও সাহসী ভূমিকা রেখে কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছেন । মুক্তিযোদ্ধের সময় তার পৈত্রিক নিবাস “কাজী বাড়ী” পাক হানাদার বাহিনী আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো । স্বাধীনতা’র যুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের জুলুম হইতে বাঙ্গালীদের বাচানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করিতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের জানমাল বাচাইতে ব্যাস্ত ছিলেন তেমনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর স্বাধীনতায় সন্দেহকারী নিরঅপরাধ লোকজনের জানমাল হেফাজত করিতে চেষ্টা করেন। তিনি কোরআন ও হাদিসের আইন বাংলাদেশে জারী’র পক্ষে ছিলেন। তিনি সকল ওলামায়ে কেরামের নানাবিধ মতবাদ সুন্নী, শিয়া ভেদাভেদ ভুলিয়া ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইত্তেহাদ হইয়া শান্তি শৃঙ্খলা অনুযায়ী ভোটের জেহাদের পক্ষপাতী ছিলেন। ১১/২/১৯৭২ খ্রিঃ হতে ১৯৭৭ খ্রিঃ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ এর ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে স্বাধীনতাত্তোর সময়ে কিশোরগঞ্জ আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসা ৮ মাস বন্ধ থাকিলে তিনি “ইসলাম”প্রসারের কথা চিন্তা করে মাদ্রাসাটি খোলা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেন। তিনি তৎকালিন সময়ের নেতৃত্বস্হানীয় ব্যাক্তিবর্গের কাছে মাদ্রাসাটি খোলা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুরোধ জানাইলে তাহারা অনুমতি দেন। এই কাজে প্রফেসর বদরুল আমিন চৌধুরী ও প্রফেসর ইব্রাহিম খলিল সাহেব তাঁকে সহায়তা করেন। উদ্যোগটি সফলকাম হলে, মাদ্রাসা’র কিতাব বিভিন্ন জায়গায় চলিয়া যাওয়াই তিনি বহু কষ্টে কিতাবগুলো সংগ্রহ করিয়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি ওস্তাদ ছাত্র সংগ্রহ করিয়া মাদ্রাসায় মেশকাত ও জাজালাইনের ক্লাস আরম্ভ করেন। তিনি সকাল ৯ টায় জামিয়া’ই মেশকাত পড়াইয়া হয়বৎনগর মাদ্রাসায় বুখারী পড়াইতেন। ১৯৭২ খ্রিঃ হইতে ১৯৭৭ খ্রিঃ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসা’র সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। সারা বিশ্বে তৃতীয়, উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত, কিশোরগঞ্জ এর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ এর ইমাম হিসাবে ১৯৭৫ খ্রিঃ হইতে ২০০৩ খ্রিঃ পর্যন্ত ২৯ বৎসর ( ৩ ঈদের নামাজ ব্যতীত ) দায়িত্ব পালন করেন, পরে বার্ধক্য জনিত কারণে অবসরে যান, পরবর্তী মুসুল্লীগণ তাহাকে সম্মাননা ইমাম করিয়াছেন । ১৯৭৭ খ্রিঃ হতে ২০০৩ খ্রিঃ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ এর ঐতিহাসিক বড়বাজার শাহাবুদ্দিন জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। ০১/০৬/১৯৭৮ খ্রিঃ হতে ২০০৪ খ্রিঃ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ এর ঐতিহ্যবাহী হয়বতনগর এ.ইউ. আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। উনার দায়িত্বকালীন সময়ে স্বচ্ছল ছাত্রদের জন্য দুতলা ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮১ খ্রিঃ এতিম ও গরিব ছাত্রদের জন্য দুতলা এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। কামিল, ফিকাহ, তাফছির, আদব, কেরাত, হেফজুল কোরআন, মোজাব্বির-ই-মাহিব, বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিভাগ চালু করেন, মসজিদুল আলিয়া স্থাপন করেন, দোতালা কতুবখানা স্থাপন করেন । এছাড়াও মাদ্রাসা’র গেইটের নকশা ইসলামিকরণ করেন । উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র হাদিস বিষয়ে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দশ সহস্রাধিক। ০৬/০৬/১৯৭৯ খ্রিঃ রোজ বুধবার, কিশোরগঞ্জ শহরে ( নগুয়া বিন্নাগাঁও) প্রথম বারের মতো নূরুল উলুম আর্দশ মহিলা মাদ্রাসা ও বালিকা এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত করেন, পরবর্তীতে আলিম ফাজিল কামিল খোলার ব্যবস্থা করেন । তিনি একাধারে ১৯৮২ খ্রিঃ পর্যন্ত উহার প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন, এমনকি এতিমখানা’র গঠনতন্ত্র তাহার সাক্ষরে জমা হইয়াছিল, যার ভিত্তিতে এতিমখানা সরকারী রেজিস্ট্রেশন ভুক্ত হয় । পরবর্তীতে সরকারী অনুদান পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক সরিয়া পড়েন এবং সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । তাঁর পৈত্রিক নিবাস ময়মনসিংহ জেলা’র নান্দাইল উপজেলা’র ৬ নং রাজগাতী ইউনিয়নের পাছদরিল্লা গ্রামে “কাজী বাড়ী” সংলগ্ন তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তি দান করে ১৯৮০ খ্রিঃ নূরে এলাহী জামে মসজিদ কমপ্লেক্স ট্রাষ্ট, ১৯৮০ খ্রিঃ শাহনাওয়াজ ছফিরিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং ১৯৮৬ খ্রিঃ নান্দাইল উপজেলায় প্রথম নূরুল উলুম ফাইজুন্নেছা ফারকুন্দা বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা, জামিয়া এ ইসলামিয়া হেফজখানা, মুফতি মাওলানা নূরুল্লাহ একাডেমী, মুফতি মাওলানা নূরুল্লাহ ইসলামীয়া লাইব্রেরী, নূরে আল্লাহ গবেষণা ও প্রকাশনা লিঃ, নূরে আল্লাহ বয়স্ক দুস্তখানা, ইসলামী দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত করেন । এছাড়াও তিনি কিশোরগঞ্জ- ময়মনসিংহ জেলা সহ বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, খানক্বাহ সহ- শতাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৫ খ্রিঃ মহিলাদের ঈদের ও জুম্মা’র নামাজ জামাতের সহিত আদায়ের ফতোয়া দেন। সেই অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে প্রথম বারের মতো এস ভি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মহিলাদের জন্য ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করেন ( যা এখনও চলমান ) এবং বড় বাজার সাহাবউদ্দিন জামে মসজিদ ও নূরে এলাহী জামে মসজিদে ( জুম্মা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ চলমান ) মহিলাদের জুম্মা’র নামাজ জামাতের সহিত আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি ফতোয়া দেওয়ার পৃর্বে সারা বাংলাদেশে মহিলাদের ঈদ ও জুম্মা’র নামাজ জামাতের সহিত আদায় করতে সচরাচর দেখা যায়নি। ১৯৯৬ খ্রিঃ কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে ( সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ) তিনিই সর্বপ্রথম কয়েদী ও হাজতীদের কে ইসলামিক দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার ( মক্তব ) কার্যক্রম চালু করেন এবং তিনি নিজে প্রতি সপ্তাহে একদিন উপস্থিত হয়ে কয়েদী হাজতীদের কে ইসলাম সম্পর্কে ওয়াজ নছিহত করতেন, যা উনার ইন্তেকালের পরও এখন পর্যন্ত চলমান। তিনি গত শতাব্দীর শেষের দিকে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন । তিনি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করার পৃর্বে ২ ঈদের জামাত ব্যতীত মাঠের মিম্বর সারা বছর অবহেলিত থাকতো । দেশে অনেক পথভ্রষ্ট মারেফত দাবিদার বেদাতী তরিকা পন্থীদের বেড়াজাল হইতে নিরপরাধ মোমিন মোমিনাতগনকে ইসলামের সঠিক পথে আনতে ও বেসরা কাজ হইতে মুক্ত করার জন্য ১৪০১ হিজরীতে ত্বরীকায়ে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) খানক্বাহ প্রতিষ্ঠিত করেন। যাহাতে মোমিন মুসলমানগণ সকল প্রকার গোনাহ হইতে বাচিয়া মাসনুন জিকির করিয়া যাইতে পারে। তিনি শিরকী, কুফরী, ফাসেকী আমল দেশ হইতে উঠাইতে এসব বিষয়ে প্রতিদিন কোরআন ও হাদিছ ভিত্তিক কিতাব লিখিয়াছেন এবং মৌখিকভাবে ওয়াজ, নছিহত, তালিম করিয়াছেন। উল্লেখ্য এই যে, তিনি মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসা’র পদ পদবী জন্য কোনো সময়ই কারো কাছে বা কোনো দপ্তরে দরখাস্ত করেন নিই, বরং বিনা দরখাস্তেই মহান আল্লাহ তায়ালা তাহাকে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন । হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মোঃ নূরুল্লাহ রহঃ এর জীবন ও কর্ম নিয়ে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা হচ্ছে। উনার ইন্তেকালের পর হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মোঃ নূরুল্লাহ রহঃ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয় । (হযরত মাওলানা আবুল খায়ের মোঃ নূরুল্লাহ রহঃ এঁর জীবন বৃত্তান্ত আংশিক প্রকাশ । ইনশাল্লাহ আগামীতে পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ করবো) SHARES ধর্ম ও জীবন বিষয়: